চট্টগ্রাম বুলেটিন

বিএনপিতে আসলাম চৌধুরীর অসামান্য ত্যাগ ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসা

সময়টা ২০১৩ সালের শেষ দিক। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর হয়ে পরের সময়গুলোতে স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে গোটা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আর তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তথা বন্দরনগরীর প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড উপজেলা অচল করে দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে হাসিনার দু:শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের নানা স্থানে গুলি, হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমাতে সক্ষম হলেও সীতাকুণ্ডের আন্দোলন যেন থামবার নয়। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে সাঁঝ আসলাম চৌধুরী নিজে শতশত নেতাকর্মী নিয়ে মহাসড়কে মিছিল, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, গণজমায়েত, সড়ক অবরোধ করে রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। বলতে গেলে ওই সময় বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘোষিত হরতাল, অবরোধ শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছিল সীতাকুণ্ডে। সরকার বুঝতে পারল আসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত কার্যত বন্দর নগরী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে দিচ্ছে। এতে যেকোন সময় সরকারের পতন হতে পারে।

 

আসলাম চৌধুরীকে ঘিরে হাসিনার পরিকল্পনা:

জাতীয় সংসদে তিন বার তিনটি অধিবেশনে শেখ হাসিনা দাঁড়িয়ে সীতাকুণ্ডের আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন। এসময় হাসিনা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে বিষোদগার করেন। শেখ হাসিনা সীতাকুণ্ডকে নরককুণ্ড অবহিত করে উল্লেখ করেন আসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব আন্দোলন চলছে। একপর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। চার দফায় গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে মুক্ত হন আসলাম চৌধুরী। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৫ মে আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের অংশ হিসেবে তিনশো মিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার ও রাজকোষ চুরির ঘটনা সামনে আসায় বিএনপি নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরীকে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড় থেকে গ্রেপ্তার করে ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয় হাসিনা সরকার। প্রথমে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ইসরাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। এরপর একের পর এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়। মোট ৭৬টি মামলা দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে। অনেক ব্যাংককে চাপ সৃষ্টি করে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দেয় সরকার এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। বিএনপির নেতাদের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।

হাসিনার নাটক ভারতের পরামর্শে:

আন্তজাল ঘেঁটে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ মে তৎকালিন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথা জানান। একইসাথে তাকে যেখানে পাওয়া যাবে গ্রেপ্তার করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর কয়েক ঘন্টা পরই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ খেলক্ষেতে যাওয়ার পথে ৩০০ ফিটের রাস্তা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে আসলাম চৌধুরীর কারাগারে কেটে গেছে আটটি বছরের বেশি। দিনের হিসেবে ৩ হাজার দিন তিনি কারাগারে কাটান। বিএনপির কোন নেতা এতো দীর্ঘ সময় বিচার বহির্ভূতভাবে কারাগারে থাকার নজির নেই। হাসিনা সরকার অভিযোগ করে আসলাম চৌধুরী ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সাথে সরকার উৎখাত করতে বৈঠক করেছে। তবে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী সেসময় বলেছিলেন, তিনি কোন বৈঠক করেননি। আরেকজনের মাধ্যমে তিনি তার সাথে পরিচয় হলে ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা ঘুরাঘুরি করেছেন। তবে কোন বৈঠক হয়নি। সেসময় এটি ভারতের ফাঁদ হতে পারে বলে জানান তিনি।

লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সরকার যেই অভিযোগ করেছে সেটি একেবারেই মিথ্যা ও হাস্যকর।

সীতাকুণ্ডের বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার ৭৬টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। জামিন পেলেও তাকে বারবার কারা ফটক থেকে আবারও পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত সরকারের বিরুদ্ধে যেই নেতাই সোচ্চার ছিলেন তাকেই কারাগারে আটকে দিতো হাসিনা। মিডিয়ায় বেশি কথা বললেও হাসিনার বেশি রোষানলে পড়তে হতো। কিন্তু বর্তমানে অবমূল্যায়িত হচ্ছেন আসলাম চৌধুরী। অথচ তার মতো ত্যাগী নেতা বিএনপিতে খুব কম আছে।

 

জানা গেছে, আসলাম চৌধরী তার কারা জীবনে দুই ভাইকে হারিয়েছেন। এর মধ্যে তার এক ভাই ইছহাক কাদের চৌধুরী ও মঈন চৌধুরী মারা যান তিনি কারাগারে থাকতেই। আসলাম চৌধুরী আদালতে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করলেও আদালত তা মঞ্জুর করেননি। শেষ বারের মতো দুই ভাইকে দেখতে না পেয়ে আসলাম চৌধুরী দু:খে কষ্টে কারাগারে অশ্রুতে গা ভেজান। সেসময় কারাগারে থাকা কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান, আসলাম চৌধুরী মনে করেছিলেন সরকার তাকে যতো নির্যাতনই করুক না কেন মৃত ভাইকে দেখতে বাধা দেবে না। কিন্তু তার সেই আশা ভঙ্গ হয়। আশ্চর্যজনকভাবে সত্য হলো, সরকার তার প্রতি এতোটাই ক্ষুব্ধ হলো যে দুই ভাইয়ের কারো জানাযায় অংশ নিতে দেয়নি। এতে তিনি কারাগারেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর শুক্রবার সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও আসলাম চৌধুরীর ভাই ইছহাক কাদের চৌধুরী ইন্তোকাল করেন। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা দেয় হাসিনা সরকার। পরে মইন কাদের চৌধুরীও মৃত্যুবরণ করেন।

 

পরিবারও নির্যাতিত:

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আসলাম চৌধুরীর রাজনৈতিক কারণে পুরো পরিবারকেই ধ্বংস করেছে সরকার। তার আরেক বড় ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং আরেক ছোট ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরীকে ধরে নিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাতো ফ্যাসিস্ট সরকার। তাদের বাড়ির এমন কোন পুরুষ লোক নেই যাদের নামে মামলা হয়নি। এমনকি তার স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ব্যবসা বাণিজ্য সব তলিয়ে যায় গেল ১৭ বছরে।

আসলাম চৌধুরী ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে করা এক মামলার এজাহারে বলা হয়, আসলাম চৌধুরীর পারিবারিক মালিকানাধীন রাইজিং স্টিল লিমিটেড পুরোনো জাহাজ ক্রয়ের জন্য ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনটি ঋণপত্রের (এলাসি) বিপরীতে এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩২৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৫ টাকা ঋণ নেন। প্রকৃত সত্য হলো আসলাম চৌধুরীকে ব্যবসাই করতে দেয়নি হাসিনা। ব্যবসায় কঙ্গনে সুনামধন্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি হিসেবে তার রয়েছে খ্যাতি ও পান্ডিত্য।

 

আসলাম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান ধ্বংস:

আসলাম চৌধুরীর পারিবারিক শিল্প গ্রুপ রাইজিং গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ছোট-বড় অসংখ্য কল-কারখানা ছিল। বিশেষ করে গ্রেপ্তারের ফলে ব্যবসায় একের পর এক লোকসান গুণতে হয়। এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে আসলাম চৌধুরীকে দেশদ্রোহী ট্যাগ দিয়ে হাসিনা তার প্রতিষ্ঠানকে জাহাজ আমদানির এনওসি না দিতে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নগরের বায়েজিদে একটি কোল্ড স্টোরেজ থাকলেও সেখানে গেল ১৭ বছর ধরে কোন ব্যবসা নেই। একপ্রকার বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সেই কোল্ড স্টোরেজ। এছাড়াও কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলির তীরে একটি নতুন (প্রথম অটো ব্রিক কারখানা) অটোব্রিক কারখানা গড়ে তুললেও ওইসময় সরকার সেটি চালুই করতে দেয়নি। কোটি কোটি টাকার মালামাল ও যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা লুট করে নিয়ে নেয় রাতের অন্ধকারে। সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে সমুদ্র উপকূলে তেল শোধনাগার দখল করে নেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হাসান মাহমুদ।

অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করাই ছিল টার্গেট:

লায়ন আসলাম চৌধুরী সীতাকুণ্ডে দু্র্বার আন্দোলন গড়ে তোলায় তার বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার টানা ব্যবস্থা নিতে থাকে। কথিত আছে, আসলাম চৌধুরী একাই হাসিনার পতনের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। আর হাসিনা বুঝতে পেরে তাকেই টার্গেট করে। তাকে ভারতের পরামর্শে ইসরাইলি নেতার সাথে বৈঠকের কথা বলে গ্রেপ্তার করে। কার্যত দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে তিনি দল থেকে দূরে থাকেননি। কারাগারে থেকেই চালিয়েছেন সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম। এই দীর্ঘ সময়ে আসলাম চৌধুরীর তীলে তুলে গড়ে তোলা সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে দেয় স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার।

 

কি বলছেন বিএনপি নেতারা?

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জহুর বলেন, অনেক বিএনপি নেতা নির্ভিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে নিলেও লায়ন আসলাম চৌধুরীকে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেওয়া হয়নি। তার শ্রমে-ঘামে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে পতিত সরকার। আজকে তিনি শূণ্য হাতে। তিনি আরও জানান, ভারতের ‘’র’’ এর পরিকল্পনায় আসলাম চৌধুরীকে ইকোনোমিক্যালি প্যারালাইজড করে দেওয়া হয়েছে। এখনও তার বিরুদ্ধে গুপ্ত একটি চক্র সক্রিয়। তার কারণ একটাই তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক সফল নেতা। যিনি আওয়ামী লীগের ভিত কাঁপিয়ে তুলেন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, আসলাম চৌধুরীকে ভারতের পরিকল্পনায় ফাঁসানো হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ ভারতের পরিকল্পনায় আমাদের দেশে অনেক কিছু হয়েছে। অনেক নেতা গুম হয়েছে। এটি অবাস্তব কিছু নয়। তিনি আরও জানান, আসলাম চৌধুরী সফল রাজনীতিবিদের পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ীও বটে। তার সাফল্য অনেকের কাছে ঈর্ষনীয়। এটিই তার কাল হয়েছে। প্রায় নয় বছর জেলে থাকলে সেই মানুষের আর পাওয়ার কিছু থাকেনা। আসলাম চৌধুরীর কয়েকটি সিএনজি স্টেশন ছিল সেগুলো বিক্রি করে দিতে হয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শেষ। শত কোটি টাকা বিনিয়োগ বিফলে গেছে একমাত্র রাজনৈতিক কারণে। তিনি ব্যবসা করতে পারলে কোনদিন ঋণখেলাপি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সীতাকুণ্ডের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা আরও জানান, লায়ন অধ্যাপক আসলাম চৌধুরী হলেন তৃণমূলের প্রাণ ভোমরা। তিনি জানেন কর্মীদের মনের ভাষা। কর্মীরা কি চান তিনি তা বুঝতে পারেন। এজন্যই তিনি জনপ্রিয়। সীতাকুণ্ডে তার বিকল্প তিনি নিজেই।

জানা গেছে, গত বছরের ২০ আগস্ট আসলাম চৌধুরী কারাগার থেকে মুক্তি পান। ওইদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে বরণ করে নিতে কারা ফটকে ভিড় করে। বৃষ্টি উপেক্ষা আসলাম চৌধুরী নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন। সেদিন কয়েকশ গাড়ি আসলাম চৌধুরীকে ঘিরে রাখে। দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার পথে নেতাকর্মীরা তাকে ফুল ছিটাতে থাকে। বৃষ্টিতে ভিজে এই সংবর্ধনা গ্রহণ করেন তিনি। সীতাকুণ্ডের সিটি গেইট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সাথে তার চোখাচোখি হয়। ওইদিন বিকাল পাঁচটায় তিনি ভাটিয়ারীর জলিল এলাকায় প্রবেশ করে তার বাড়িতে যান। নারী, পুরুষ, শিশু সকল বয়সের গ্রামবাসী তাকে একনজর দেখতে উপচে পড়েন। মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের কবর জিয়ারত করে চোখে অশ্রু নিয়ে আসলাম চৌধুরী ঘরে বহু বছর পর জন্মভিটায় রাখেন। সেদিন তিনি নিজেই আসরের নামাজের ইমামতি করেন। তার ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন এলাকার ময়মুরুব্বি সকলে।

 

৫ আগস্ট পরবর্তী আসলাম চৌধুরী:

কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলাম চৌধুরী নানান সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রাম -৪ সীতাকুণ্ড আসন কর্নেল হাট ও আকবর থানার আংশিক এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর থেকে ছলিমপুর পর্যন্ত পুরো এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সীতাকুণ্ড উপজেলার পাশাপাশি দলের হয়ে হাটহাজারীতে হেফাজতের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের পাশে থেকে আর্থিক সহ সকল ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। এছাড়াও পুরো উত্তর চট্টগ্রামে তার সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষামূলক বৃত্তি ও সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি।

 

আসলাম চৌধুরীকে ঘিরে গুজব:

আসলাম চৌধুরীকে ঘিরে ব্যাপক গুজব লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি তার নামে ও ছবি দিয়ে নগর ও ঢাকায় বিভিন্ন পোষ্টার ছাঁটানো হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ওইসব পোষ্টারে বলা হয়েছে, আসলাম চৌধুরী নতুন দল গঠন করছে। তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানাননি তিনি। উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোরসালিন জানান, এগুলো দুরভিসন্ধীমুলকভাবে একটি চক্র করছে। আসলাম ভাই এ ধরণের কোন পোষ্টার ছাপাননি। ওনাকে বিতর্কিত করতে এসব করা হচ্ছে।

 

উত্তর জেলা কমিটিতে আলোচনায় আসলাম চৌধুরী:

সম্প্রতি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হলে তাকে ঘিরে আবারও আলোচনা হয়। অনেকেই তাকে আবারও এই দায়িত্বে দেখতে চাওয়ার কথা জানান। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি আর এই দায়িত্ব নিতে রাজি নন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসের উপদেষ্টা। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন।

আসলাম চৌধুরীর জীবনের বড় দু:খ:

আসলাম চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে জানান, প্রায় সাড়ে আট বছর জেলে থাকার পর স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের ফলশ্রুতিতে যখন জেলমুক্ত হলাম তখন দেখলাম আমার আদরের সেই মেয়েটা বড় হয়ে গেছে। বাবা হিসেবে চোখের সামনে তাকে আর বড় হতে দেখলাম না আমি। তাকে আমি সময় দিতে পারলাম না। তার গ্রোনআপটাই আমার দেখা হয়নি। আপনারা জানেন যে, ছেলেমেয়েরা যখন পরীক্ষার হলে যায়, তারা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে এবং হল থেকে সন্তান বের হলে ছেলে মেয়েকে এটা-ওটা খেতে দেয়, স্নেহ করে হাত ধরে বাসায় ফেরে। আমিও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম নই। অন্য দশজন মা-বাবার মতো আমারও এমনটা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হলে যেতে ও বাইরে অপেক্ষা করার সৌভাগ্য হয়নি। এমনকি আমি বাবা হয়ে তার বেড়ে ওঠাটাই দেখা থেকে বঞ্চিত হলাম৷ আমি জানতাম সরকার আমাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করবে। কিন্তুু আমি চেয়েছিলাম মেয়েকে প্রথম দিন পরীক্ষার হলে দিয়ে তারপর গ্রেপ্তার হব৷ গ্রেপ্তারের পরেরদিন তার পরীক্ষা৷ আগের দিন রাতেই আমি গ্রেপ্তার হই৷ এটা তার মনে যেমন প্রভাব পড়ে তেমনি আমারও মনে দাগ কাটে।

 

দলে উপেক্ষিত আসলাম চৌধুরী:

গত ৩ নভেম্বর গুলশান কার্যালয় থেকে জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে ওই তালিকার নাম নেই লায়ন আসলাম চৌধুরীর। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কাজী সালাউদ্দিনকে দেয়া হয় চট্টগ্রাম-৪ আসনে মনোনয়ন। এরপর থেকে তীব্র ক্ষোভ দেখাতে থাকেন নেতাকর্মীরা। টানা সাত ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে তারা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন বঞ্চিতের প্রতিবাদ করে। এরপর গত ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের জনসভার বাড়বকুণ্ড হাই স্কুল মাঠে আসলাম চৌধুরীর উপস্থিতিকে ঘিরে হাজার হাজার নেতা কর্মীর ঢল নামে৷ তার পক্ষে রাস্তায় নামলে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সাতজন শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করা হয়৷ এরপরও নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আসলাম চৌধুরীর জন্য প্রয়োজনে হাজার হাজার নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

 

সম্প্রতি লায়ন অধ্যাপক আসলাম চৌধুরী বলেন, ধানের শীষ আমারই থাকবে, আপনাদেরই থাকবে, ইনশাল্লাহ আমি বেঁচে থাকলে নির্বাচনে অংশ নেব। যে বা যিনি মনোনয়নের মূল্যায়ন করেন তাকে অবশ্যই জনগণের পালস বুঝতে হবে। অন্যথায় জনগণই এর কড়া জবাব দেবে৷ বহুল আকাঙ্ক্ষিত কোন কিছুর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিবাদ হয় এটাই স্বাভাবিক। এ সময় আসলাম চৌধুরী জাতীয় বিপ্লব সংহতি দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য, পটভূমি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন:

লায়ন আসলাম চৌধুরী ১৯৮১ সালে এসএসসি শেষ করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে আমরা লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে ট্র্যাক পরিবর্তন করে তিনি একাউন্টিং বিভাগে চলে যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। পাশাপাশি অনার্স করার পর চৌধুরী চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে বিসিএসে অংশগ্রহণ করে এডুকেশন ক্যাডারে তাঁর চাকরি হয়। সব মিলিয়ে দুই বছর সাত মাস আসলাম চৌধুরী চাকরি করেন। ইতিমধ্যে তিনি চার্টার্ট একাউন্ট্যান্ট হয়ে যান। এরপর চাকরী জীবন চুকিয়ে দেন তিনি।

তিনি জানান, এটি তার ক্যারিয়ারের পরিকল্পনার অংশই ছিল যে চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট হওয়ার পর তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপনার চাকরিটা ছেড়ে দিবেন। ওইসময়ে চাটার্ড একাউন্ট্যান্টের বেশ ভালো ডিমান্ড ছিল। এরপর আসলাম চৌধুরী নিজ এলাকায় কনফিডেন্স সিমেন্টে জয়েন করেন। প্রায় সাত বছর তিনি সেই কোম্পানিতে কাজ করেন। বহু লোককে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক কাজে তিনি লায়ন্স ক্লাবে যুক্ত ছিলেন। লায়ন্স জেলা ৩১৫ বি ৪ এর প্রাক্তণ গভর্ণর আসলাম চৌধুরী।

 

লেখক: সম্পাদক, চট্টগ্রাম বুলেটিন

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

তাং: ১০ নভেম্বর ২০২৫

Tags :

সর্বশেষ