চট্টগ্রাম বুলেটিন

সীতাকুণ্ডে এবার বালু উত্তোলনের ড্রেজার-বাল্কহেড পুড়ে দিলো স্থানীয়রা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় এবার সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দুটি ড্রেজার ও একটি বালু বহনকারী বাল্কহেড পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুটি ড্রেজার পুড়ে গেছে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটঘর এলাকা সংলগ্ন আলেকদিয়া সমুদ্র উপকূলে এ ঘটনা ঘটে। তবে সন্ধ্যার পর এ ঘটনার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে৷

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর কুমিরা ইউনিয়নের ঘাটঘর ( সন্দ্বীপ ফেরীঘাট) এলাকার আলেকদিয়া গ্রামের স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে শিপইয়ার্ডের পাশে সমুদ্রে থাকা বালু তোলার দুটি ড্রেজার ও একটি বাল্কহেড আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ড্রেজারগুলো উপকূলে দন্ডায়মান ছিল। পরে স্থানীয়রা সেখান থেকে চলে যায়৷ এসময় গ্রামবাসী বালু উত্তোলনকারীদের প্রতিরোধের ঘোষণাও দেন বলে জানা গেছে।

তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে দীর্ঘদিন সাগর থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির ব্যবসা করতে গিয়ে একটি বালু খেকো গ্রুপ পরিবেশ, প্রতিবেশ ও কৃষি, জলবায়ুর ক্ষতি করছে। এতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ওই এলাকায় এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড না চালানোর জন্য স্থানীয়রা বারবার নিষেধ করলেও বালু উত্তোলকারীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাগর থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার দুপুরে নামাজের পর ঐক্যবদ্ধ গ্রমাবাসী আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে ড্রেজার ও বাল্কহেড ধংস করে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, পুড়ে যাওয়া বাল্কহেড ও ড্রেজারের মালিক জহির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি কয়েকজনের কাছে সেগুলো বালু উত্তোলনের জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। তবে গত এক বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৫ লাখ টাকা ইজারা মূল্য জমা দিয়ে মাত্র দুই লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলনের জন্য অনুমতি নিয়ে রায়হান উদ্দিন নামে একজন জামায়াত নেতা ‍কুমিরা ইউনিয়ন জামায়াত নেতা জসিম উদ্দিনের সহযোগিতায় অবৈধভাবে লাখ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলন করছে বলে জানা গেছে। একই পদ্ধতিতে বিএনপি’র তিনটি গ্রুপও বালু উত্তোলনের ইজারা বাগিয়ে আনে৷

তাদের অনুমোদন গত সেপ্টেম্বর থেকে হলেও তারা ৫ আগস্টের পর থেকে ভাগাভাগি করে সাগর নিয়ন্ত্রণে নেন৷ বর্তমানে ৫০টির অধিক ড্রেজার পরিচালনা করছে এসব গ্রুপ৷ অথচ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চট্টগ্রাম বন্দরের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ মাত্র দুটি ড্রেজার পরিচালনার অনুমতি দেয়৷ বন্দরের অনুমতি দেওয়া নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ অনেকেই মনে করছেন, চট্টগ্রাম বন্দর বালুর রাজনৈতিক নেতাদের বালু তোলার ইজারা দিয়ে গ্রামে গ্রামে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছেন। সীতাকুণ্ডের গ্রামগুলোতে এখন জেলেরা সাগরে জাল দিতে পারছেন না৷ তাদের সহযোগিতায় একরের পর একর কৃষি জমি ভরাট করে ফেলছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ।

জানা যায়, জামায়াত নেতা রায়হান উদ্দিন, আলেকদিয়ার বিএনপি কর্মী রুবেলসহ বেশ কয়েকজনের একাধিক সিন্ডিকেট ইতিমধ্যে সেখানে কয়েকটি বন্ধ হয়ে পড়া শিপইয়ার্ড ভাড়া নিয়ে বালুর সেলস সেন্টার গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প কারখানার সাথে কৃষি জমি ভরাটের চুক্তি করছেন তারা।

সূত্র জানায়, জামায়াতের একটি ও স্থানীয় বিএনপির আরও তিনটি গ্রুপসহ মোট চারটি গ্রুপ সেখানে বালু উত্তোলনে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কথিত আছে, এই চার গ্রুপ বন্দর থেকে সাময়িক অনুমতি নিয়ে স্থানীয়দের আপত্তির মুখে বালু উত্তোলন করে রমরমা ব্যবস্থা চালাচ্ছেন৷ এতে এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে৷ বিরুপ প্রভাব পড়ছে জনজীবনেও।

শুক্রবার ড্রেজার পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে নৌ-পুলিশ ও থানা পুলিশের দুটি টীম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে। তবে কারা এসব বালু উত্তোলন করছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, কুমিরার আলেকদিয়া এলাকায় আগে থেকে বেড়িবাঁধ ভাঙা ছিল। বালু উত্তোলন করায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শুক্রবার দুটি ড্রেজার ও একটি বাল্কহেড জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর জানতে পেরেছি। তবে কারা এগুলোর মালিক আমরা তদন্ত করছি।

এ বিষয়ে জামায়াত নেতা রায়হান উদ্দিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷ এর আগে সৈয়দপুর ইউনিয়নে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের হয়ে কৃষি জমিতে বালু ভরাট করতে গেলে বালু উত্তোলনকারীদের ধাওয়া করে গণধোলাই দেয় গ্রামবাসী।

Tags :

সর্বশেষ