চট্টগ্রাম বুলেটিন

আওয়ামী জেলা নাজির জামাল এখনও জেলা প্রশাসনে

বদলির তদবির তার হাতেই
অদৃশ্য কারণে হননা বদলি

চট্টগ্রাম বুলেটিন প্রতিবেদক:

পেশায় সরকারি কর্মচারী হলেও কোন নিয়মেরই তোয়াক্কা করেন না তিনি। সরকারি চাকরীবিধি তার কাছে মামুলি ব্যাপার। মুজিব বন্দনা এতোটাই করতেন যে আওয়ামী লীগের কর্মী সেজে রীতিমতো বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকারও দিতেন। পদে কর্মচারী হলেও ভাবসাব আর আচরণে তিনিই ডিসি। জেলা প্রশাসনে চাউর আছে, তিনি সবকিছুর অঘোষিত হর্তাকর্তা। তার ইশারায় চলে সকল অনিয়ম, ঘুষ লেনদেন। সরকার পতনের পর তিনি সার্কিট হাউজে লুকিয়ে থাকলেও কিছুদিন আবারও প্রকাশ্যে আসেন। তিনি আর কেউ নন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। হাসিনাকে অন্তর লালন করা জুলাই বিরোধী এই কর্মচারী ৫ আগস্টের পরও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলা প্রশাসনে। বদলিতো হননি উল্টো ধারাবাহিতকার অংশ হিসেবে ডিসির সবচেয়ে কাছের মানুষ এখন তিনি।

অভিযোগ ওঠেছে, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জুলাই আন্দোলনে সময় আওয়ামী লীগের কর্মীদের খাবার সরবরাহ করতেন। তাছাড়া টাকা ঢেলেছেন তিনি। সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে আদালত অঙ্গনে পোষ্টারে সাঁটান ভুক্তভোগীরা। এতে তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করা হয়। এতোকিছুর পরও জামাল উদ্দিন বহাল তবিয়তে আছেন স্বপদে। আগের মতোই সব তদবির বাণিজ্য, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, ইজারা/লীজ বাণিজ্য, ভূমি জালিয়াতি, শ্রেণি পরিবর্তন কারবার চালাচ্ছেন। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে তহসীলদারদের বদলি ও অফিস সহায়কদের বদলি তিনি হ্যাণ্ডেল করেন ঘুষের বিনিময়ে। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়ও আছে তার নিয়ন্ত্রণ।

জানা গেছে, মাত্র ৩০ হাজার টাকা বেতন পেলে জামাল থাকেন দেড় কোটি টাকা মূল্যের ডাবল ফ্ল্যাটে। জীবনযাপন ও আয়েশি জামালের। ২০০৫ সালে জেলা প্রশাসনে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দিয়ে চাকরী শুরু করেন তিনি। আর দুই দশকে জামাল এখন সম্পদের কামাল। নগরের কোর্ট রোড় এলাকায় কেসি দে গ্রাণ্ড ক্যাসেল ভবনের চতুর্থ তলায় দুই হাজার ৬৫ বর্গফুটের ফোর সি ও ফোর ডি দুটি ফ্ল্যাটে থাকেন জামাল ও তার পরিবার। যার বর্তমানে মূল্য দেড় কোটির বেশি। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ৮৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকায় ফ্ল্যাট দুটে ডেভেলফমেন্ট কোম্পানী ডি ডেভেলফমেন্ট থেকে কেনেন বলে জানা গেছে।

অফিস সহকারী হিসেবে চাকরীতে ঢুকলেও বিভিন্ন ভূমি অফিস ঘুরে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর জামাল জেলা নাজিরের পদ বাগিয়ে নেন। এই পদে নিতে তার বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেনির কর্মচারী হয়েও জৈষ্ঠ্যতা লঙ্গনের অভিযোগ আছে। অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের কাছে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা একটি অভিযোগ দিয়েছেন যে দীর্ঘদিন ধরে তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে ১৫-১৬ বছর ধরে পছন্দের পদে পছন্দের অফিসে রয়ে গেছেন।

মূলত নাজির পদেই বসেই সম্পদের মালিক হতে শুরু করেন তিনি। সম্প্রতি দুদকেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে। এর আগে দুদক হিসেব চাইলে জামাল উদ্দিন বহু সম্পদ গোপন করে মাত্র ১৩ লাখ ৭৬ হাজার স্থাবর ও ২২ লাখ ৮৬ হাজার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেয়। তার স্ত্রী রুনা আক্তারের মাত্র ৫৫ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দেন। তবে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ এ জামালের আয়কর রিটার্ন অনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাত্র অর্ধকোটির সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরায় তিনি আত্মীয় স্বজনদের নামে বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। এসবের বাইরে তার গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশের গাছবাড়িয়ায়ও রয়েছে নামে-বেনামে সম্পদ। সেখানকার কলেজ গেটে তার স্ত্রীর নামে একাধিক দোকান থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

জামাল চরম পর্যায়ের মুজিব বন্দনা করতেন। বিভিন্ন আওয়ামী চ্যানেল ও পত্রিকা ভাড়া করে মুজিবকে নিয়ে বক্তব্য দিতেন। আওয়ামী লীগের মন যুগিয়ে বদলির হাত থেকে বাঁচতেন তিনি। তাছাড়াও আওয়ামী লীগের মহানগর ও দক্ষিণ জেলার নেতাদের সাথে তার ছিল হরহামেশা যোগাযোগ।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে জামালের দেওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, জামাল উদ্দিন বলেন, শেখ মুজিবকে নিয়ে আলোচনা করতে হলে দিনের পর দিন চলে যাবে। এসময় তিনি শেখ হাসিনার বন্দনা করেন নানাভাবে। ৪১ সালের ভিশনের সাথে একমত হয়ে তিনি শেখ হাসিনাকে ততদিন পর্যন্ত দেখতে চান। এমনকি হাসিনার মতো ভালো নেতৃত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে আর আসবে না এবং নেই বলেও মন্তব্য করেন। তার সহকর্মীরা জানান, জামাল কোন কর্মকর্তা না হলেও সবসময় কর্মকর্তা ভাব নিয়ে থাকেন। তার সব কার্যক্রম চাকরীবিধির লঙ্গন।

একটি সূত্র জানায়, জামাল সম্প্রতি দুদক থেকে বাঁচতে তার ফ্ল্যাট আত্মীয়দের নামে হস্তান্তর করেছেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোঃ কামরুজ্জামান জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি আমরা পেয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে জেলা নাজির মো. জামাল উদ্দিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি৷

 

Tags :

সর্বশেষ