চট্টগ্রাম বুলেটিন

আওয়ামী লীগ নেতা মনজুর আলমের সাথে খোশগল্পে কাজী সালাউদ্দিন

চট্টগ্রাম -৪ সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী-আকবরশাহ আসনে বিএনপির প্রাথমিক সংসদ সদস্য মনোনীত প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চসিক মেয়র এম মনজুর আলমের আলোচনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ গত শুক্রবার দুপুর থেকে তার সাথে মনজুর আলমের একটি ছবি ও ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ এ ঘটনায় খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাই কাজী সালাউদ্দিনকে এক হাত নিয়েছেন৷ তারা বলছেন, এমনিতেই কাজী সালাউদ্দিনের মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে নানা অসন্তোষ রয়েছে৷ তার উপর তিনি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন৷

ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, কাজী সালাউদ্দিন একটি কক্ষে সাবেক চসিক মেয়র ও সীতাকুণ্ডের ডামি এমপি দিদারুল আলমের চাচা এম মনজুর আলমের সাথে বসে খোশ গল্পে মেতেছেন। পাশে আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আছেন৷

জানা যায়, সম্প্রতি তিনি নগরের কাট্টলীতে একটি জানাযায় গেলে সেখানে মনজুর আলমের অনুরোধে তার অফিসে গিয়ে বসেন৷ এসময় তাদের মধ্যে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা হয় এবং তারা পরে একান্তভাবে আলাপচারিতায় কাটান বলেও জানা গেছে।
মনজুর আলম চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে তিনি বারবার ভোল পাল্টান৷ তিনি দেশজুড়ে সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে বেশি পরিচিত। তাকে চট্টগ্রামের তৈমুর আলম খন্দকার বলে থাকেন অনেকে।

জানা যায়, ২০১০ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কমলা প্রতীকে ব্যবসায়ী এম মনজুর আলম চসিক মেয়র নির্বাচিত হন। পরে তিনি একাধিকবার আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের সবকটি ভুয়া, ডামি নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে ব্যাপক তৎপরতা চালান৷ সর্বশেষ ২০২৪ এর আমি-ডামি নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে ফুলকপি প্রতীকে ডামি হিসেবে নির্বাচন করে বৈধতা দেন৷

তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি পলাতক খুনী ফ্যাসিস্ট হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন৷ ২০২২ সালে ১৯ অক্টোবর নগরের হালি শহরের সাগরপাড়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে শেখ রাসেলের নামে স্টেডিয়াম গড়ে তুলেন৷ পরে শেখ হাসিনা সেটি অনলাইনে উদ্বোধন করেন৷ যাবতীয় আয়োজন করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ওই সময় তিনি নিজেকে ও তার পরিবারকে আওয়ামী পরিবার এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। এছাড়াও তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে আল্লাহর অলি হিসেবে আখ্যা দেন।

এমন বহুল বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত এম মনজুর আলমের সঙ্গে বিএনপি’র প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ আলোচনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে বহুল বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির আপন চাচার সঙ্গে আলাপ করা দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে ধৃষ্টতা দেখানোর সামিল৷ এতে তিনি উপজেলার বিএনপি সংগঠনকে সমালোচনার মুখে ফেলেছেন।

সীতাকুণ্ড পৌরসভা বিএনপি’র সদস্য সচিব ছালে আহাম্মদ সলু সওদাগর আমার দেশকে বলেন, কাজী সালাউদ্দিন সীতাকুণ্ডে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। তার এলাকা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। একের পর এক তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সীতাকুণ্ড বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। কাজী সালাউদ্দিনের সাথে আওয়ামী লীগের আঁতাত রয়েছে। যার কারণে তিনি গত ১৭ বছরে কখনো পুলিশের হাতে গ্রেফতার হননি। এমনকি একদিনের জন্যেও কারাগারে যাননি। মনজুর আলমের সাথে দেখা তারই প্রমাণ বহন করে৷

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোঃ মোরসালিন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র মঞ্জু বলেছিলেন শেখ মুজিব আল্লার একজন অলির মত বলেছিলেন এই বাংলাদেশ একদিন সোনার বাংলাদেশে রূপান্তর হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা যেখানে পলাতক সেখানে ধানের শীষের প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র মঞ্জুর সাথে চা খাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও নিয়ে এলাকার সর্বত্রই ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনেকেই বলাবলি করছেন যে আওয়ামী লীগ নেতার সাথে তার স্বার্থের সম্পর্ক রয়েছে। আর না হয় তিনি সেখানে গেলেন কেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর ও বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ ও শাহাবুদ্দিন মেম্বারসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কাজী সালাউদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেলেও তাদের ব্যবসার লাভের টাকা তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন কাজী সালাউদ্দিন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ বাকের ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের রাতের ভোটের এমপি দিদারুল আলমের সাথে কাজী সালাউদ্দিনের সখ্যতার বিষয়ে সীতাকুণ্ডের বিএনপির অনেকেই জানেন। তাছাড়া কাজী সালাউদ্দিন ও তার ভাইয়ের সাথে শিপ ইয়ার্ডের মালিক আওয়ামী লীগের ডোনার মাষ্টার কাশেমসহ অনেকের সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সাথে কাজী সালাউদ্দিনের ব্যবসা বাণিজ্য ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কারণে অতীতে কখনো পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়নি এমনকি একদিনের জন্য সেই কারাগারে যায়নি।

Tags :

সর্বশেষ