চট্টগ্রাম বুলেটিন

জেগে ওঠা চরে লবণ পানিতেই ধানের বাম্পার ফলন সন্দ্বীপে

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সমুদ্রসংলগ্ন ডোবা চরগুলোয় লবণসহিষ্ণু দেশি জাতের ধান ‘রাজাশাইল’র এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা যত ধান দেখেছেন সেগুলোর মধ্যে রাজাশাইল সেরা। এটির বিশেষ গুণ হলো—এটি এমন লবণাক্ত জমিতে জন্মায় যেখানে দিনে দু’দফা জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। বেড়িবাঁধের বাইরে অরক্ষিত চরাঞ্চলে যেখানে নোনাজলের কারণে সাধারণ কৃষিকাজই করা কঠিন, সেখানে রাজাশাইল বরং জোয়ারের পানিতে ডুবেই বাড়ে। সবুজ চরের চাষি নিজাম উদ্দিন বললেন, ‘জোয়ারে দিনে দুবার না ডুবলে রাজাশাইল ঠিকমতো ফলনই দেয় না।’

জানা যায়, সন্দ্বীপ শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠা নতুন চরগুলোই এখন কৃষির জন্য বিরল সম্ভাবনাময় ভূমিতে রুপ নিয়েছে। বহু বছর পর পুরোনো বাসিন্দারা আবার ফিরে এসে এই জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন। রাজাশাইলের সাফল্য দেখে কেউ নতুন করে ঘর তুলছেন, কেউ পরিবার নিয়ে স্থায়ী হওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরগুলোতে। দীর্ঘাপাড়ের বাসিন্দা আব্বাস মিয়া তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ধানের বোঝা বাঁধছিলেন। কাজ করতে করতে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জোয়ারের সঙ্গে অনেক পলিমাটি আসে, যা জমিকে অত্যন্ত উর্বর করে তোলে। আর বর্তমানে রাজাশাইলের ব্যাপক ফলন হচ্ছে। আমরা এতে খুশী।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রাজাশাইল চাষ হয়েছে সন্দ্বীপে। পলি জমার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই চরগুলো আগামী বছরগুলোয় আরো উৎপাদনশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের পলিমাটি এবং অনুকূল আবহাওয়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাজাশাইলের বীজের নমুনা গবেষণার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

নতুন জেগে ওঠা চর ছাড়াও সন্দ্বীপের পূর্বপ্রান্তে বেড়িবাঁধের বাইরের প্রায় দুই হাজার কানি (১ কানিতে ১৬০ শতক) জমিতে রাজাশাইলের চাষ হয়েছে এবার। কিন্তু বিভিন্ন ছত্রাক ও পোকার আক্রমণের কারণে আশানুরূপ ফসল পাননি সেখানকার চাষিরা। মগধরার বাসিন্দা জহির আহমেদ জানান, তিনি কমলার চরে প্রায় ১০ কানি জমি চাষ করে গতবারের চেয়ে অর্ধেক কম ধান পেয়েছেন এবার। পূর্বদিকের সব চরে পলি জমতে জমতে উঁচু হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি ঠিক সময়ে প্রবেশ করতে পারে না। আর এত বিপুল পরিমাণ জমিতে কীটনাশক প্রয়োগও অনেক খরচের বিষয়। সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার কথাও জানান তিনি। ফলে পোকা ও ছত্রাক দমন করা কঠিন গয়ে পড়ছে।

মগধরা, বাউরিয়া ও গাছুয়া ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, কৃষি অফিস থেকে যদি সঠিক ও পর্যাপ্ত নির্দেশনা পেত তাহলে পোকা ও ছত্রাক দমনে ব্যবস্থা নিয়ে ফলন আরো ভালো হতো।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাজাশাইলের গড় ফলন ২ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন, যা এবারের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গবেষণার মাধ্যমে লবণসহিষ্ণু বীজ তৈরি, সংরক্ষণ, ধানের বিপণন ব্যবস্থা ও সরকারি সহায়তা বাড়লে তবে সন্দ্বীপসহ দেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল খুব দ্রুতই এশিয়ার অন্যতম শস্যভান্ডারে পরিণত হতে পারে।

 

 

Tags :

সর্বশেষ