সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাবে উপকূলের কৃষি, পরিবেশ, প্রাণীকূল, জনস্বাস্থ্য ও জনজীবনে কেমন প্রভাব পড়ছে ও প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ বিষয়ে মিডিয়া ডায়ালগ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উই ক্যান কক্সাবাজার।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বেলা দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে এ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল সেশনটি পরিচালনা করেন উই ক্যান কক্সবাজার-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক। সহযোগী হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম সমন্বয়ক ইফতিয়াজ উদ্দিন ইফতি, ট্রেজারার শেখ ওয়াহিদা রহমান ঐশী এবং সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।
ইফতিয়াজ ইফতির সঞ্চলনায় এতে বক্তব্য রাখেন সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম, সদস্য সচিব সুলাইমান মেহেদী হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান কামরুল, ইলিয়াছ ভূঁইয়া, ফারহান সিদ্দিক, হাকিম মোল্লাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।
এতে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক সংগঠনের কার্যক্রম ও সীতাকুণ্ড নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ওমর ফারুক। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সীতাকুণ্ডের মানুষ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া এখানকার বাসিন্দারা দিনদিন উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। আমরা জনসাধারণকে সচেতনতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করব। বিভিন্ন কর্মসূচীর পাশাপাশি আমরা গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশে সহযোগিতা করব নানা তথ্য দিয়ে। সেইসাথে কিভাবে সীতাকুণ্ডে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা যায় তা নিয়েও কাজ করব। পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন বন্ধ, বন ধ্বংস এসব কর্মকাণ্ড কারা করছে তার তালিকা করে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা জরুরী।

সাংবাদিকরা মুক্ত আলোচনায় জানান, সীতাকুণ্ডে কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। আগের মতোই পরিবেশ দূষণ করে মহাসড়কের পাশে ডাম্পিং রাখা হয়েছে। এতে কৃষির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও জাহাজ ভাঙা শিল্প সীতাকুণ্ডের জন্য একসময় অভিশাপ ছিলো। এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। ইয়ার্ডগুলো গ্রীণ হচ্ছে। আমরা আশাবাদী। তারা আরও জানান, উপকূলে এখন আর সবজি চাষ হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চাষাবাদ কমছে। কারণ বেড়িবাঁধ এলাকায় জমির লবণাক্ততা অনেক বেড়ে গেছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে নিন্ম এলাকা ডুবে যাচ্ছে। বারবার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তারা কৃষি ছাড়ছে। অনেকে সরকারি প্রকল্পে বাপ-দাদার ভিটা দিয়ে নিজেরা উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে। এখানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদী ভাঙন হচ্ছে, রাঘববোয়ালরা কিছু অপ-সাংবাদিকের সহযোগিতায় বন্য প্রাণী, উপকূলীয় বন, সরকারি জমি, পাহাড়, সমুদ্র সব শেষ করে দিচ্ছে। জিপিএইচ ইস্পাতের দূষণে সেখানকার নারীর গর্ভ ক্ষমতা হারাচ্ছে। প্রতিবার বন্যা হচ্ছে। অনাবৃষ্টি, গাছপালা নিধন, বনায়ন ধ্বংস, অতিগরম, অসময়ে শীত ও বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হচ্ছে। কলা, ডাবসহ অনেক দেশী ফল এখন বিলুপ্ত। আগামীর প্রজন্মকে বাসযোগ্য পৃথিবী দিতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তৈরি হতে হবে।

দ্য আর্থ ও ইয়ুথ ফর কেয়ার এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের ১০ জন সাংবাদিককে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সাংবাদিকতায় উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।