চট্টগ্রাম বুলেটিন

২০১৮ সালের ভুয়া ভোট: শুনানীতে বারবার পানি পান করছিলেন বরিশালের ডিসি

গণমাধ্যমে কথা বলেননি বরিশালের ডিসি

সাবেক বিভাগীয় কমিশনার বললেন, কারচুপি ঠেকাতে অনেক চেষ্টা করেছি, শতভাগ পারিনি

২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ভোট জালিয়াতির কারিগর সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, সহকারী রিটার্নিং অফিসার তৎকালিন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বর্তমানে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন।

শুক্রবার বিকালে তারা চট্টগ্রাম নগরের লাভলেইনস্থ নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হন। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম ৫ (হাটহাজারী) আসনে ২০১৪ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব প্রার্থীদের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আর দুপুর আড়াইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ১১ আসনের ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের নিয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে রিটার্নিং ও পরে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ কর্মকর্তাদের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সকালে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম-৫ আসনের নির্বাচনের প্রার্থীদের শুনানীতে একজন মাত্র প্রার্থী হাজির হয়েছেন। তিনি কোন পরিচিত প্রার্থী নন। অন্য কোন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দেননি। ফলে শুনানীতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পায়নি জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন। অপরদিকে ২০১৮ সালের চট্টগ্রাম-১১ আসনের শুনানীতে অবসরপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান ও বর্তমানে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন হাজির হয়েছেন। এছাড়াও ১১ আসনে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তারাও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজির হন। সিএমপি থেকে তাদের অনেকের জন্য প্রটোকল পাঠানো হয়। তবে শুনানীতে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

শুনানী কার্যক্রম পরিচালনা করেন জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্য (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদা) তাজরিয়ান আকরাম হোসেন ও ড. মো. আব্দুল আলীম। তাদের সাথে তদন্ত কমিশনের আইন ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন ও মো. সোয়েবুর রহমান এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল মোমিন সরকার শুনানীতে অংশ নিয়েছেন। শুনানীতে বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নানের কাছে নানা অনিয়ম, কারচুপি নিয়ে জানতে চেয়েছিল কমিশন। তবে ঠিক কী জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তা জানায়নি নির্বাচন কমিশন ও তদন্ত কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, শুনানীতে বারবার পানি খাচ্ছিলেন বরিশালের ডিসি দেলোয়ার হোসেন। তিনি কোন অনিয়ম হয়নি বলে সাফাই গান। তাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি কোন অনিয়ম হয়নি বলে জানান। সাবেক বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নানও কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন। অনেক প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো দিতে পারেননি।

শুনানী শেষে বরিশালের ডিসি দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হয়ে কৌশলে চলে যান। জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান জানান, আমাদের কাছে কি জানতে চান? আমরা কিছু জানিনা। আমি এই মুহুর্তে আলোচনায় আসতে চাইনা। কমিশন কি জানতে চেয়েছেন আপনার কাছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে চট্টগ্রাম-১১ সংসদীয় আসনে এতো যে অনিয়ম, কারচুপি হলো আপনি কি করলেন? আমি বলেছি আমরা সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করেছি অনিয়ম ঠেকাতে। আমি একটা কেন্দ্র্রও তাৎক্ষণিকভাবে ভোট বাতিল করেছি। আমি সেটার কাগজও কমিশনকে দিয়েছি। কিন্তু শতভাগ আটকাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আগামীতে যেন এমন নির্বাচন আর না হয়। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যেন সামনে ভালো নির্বাচন হয় এটাই চাই।

 

এদিকে আজ শনিবার চট্টগ্রাম-৫ আসনে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসার (যেকোন ৫ জন), সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার (যেকোন ৫ জন), পোলিং এজেন্টকে ( যেকোন ৫ জন) ডেকেছে নির্বাচন কমিশন।

 

উল্লেখ্য, বিগত তিনটি ভুয়া ভোটের আদ্যোপ্রান্ত বের করে জড়িতদের চিহ্নিত করা। একইসাথে সরকারের কোন পর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছিল, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শুধু চাকরী বাঁচাতে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিলেন নাকি ব্যক্তিগতভাবে লাভবানও হয়েছেন তা খুঁজে বের করবে কমিশন। জানা যায়, ভবিষ্যতে আর কোন সরকার যেন এমন নির্বাচন করতে না পারেন সে বিষয়ে সুপারিশ করা হবে কমিশন থেকে। পাশাপাশি বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করা ও প্রভাব বিস্তার করা সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tags :

সর্বশেষ