চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন কাইয়ুম চৌধুরী নামে কথিত এক সাংবাদিক। চলমান পরিস্থিতিতে তার এমন ধৃষ্টতায় হতবাক জামায়াত নেতারাও। কেউ বলছেন, কাইয়ুম দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণসহ নানা স্থানে অপপ্রচার করে আসছেন। আবার কেউ বলছেন, তিনি যেই আদর্শেরই হোক না কেন দেশের অন্যতম একটি রাজনৈতিক দল নিয়ে তার এমন ধৃষ্টতা চরম বেয়াদপীর সামিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ওই বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট ছড়িয়ে পড়লে তাকে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
জানা গেছে, গত ২৬অক্টোবর শুক্রবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলার যুব বিভাগের উদ্যোগে এক যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সীতাকুণ্ডে কর্মরত মূল ধারার সাংবাদিকরা ওই সম্মেলন কাভার করে। কিন্তুু সম্মেলনের একদিন আগেই কাইয়ুম চৌধুরীর সংগঠনের সদস্যের উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা দেন যে জামায়াতের যুব সম্মেলন সংবাদ সংগ্রহে যারা যাবেন সেসব সাংবাদিকরা কালো তালিকাভুক্ত হবেন। তার ঘোষণার বিরোধীতা করেছেন খোদ তার সংগঠনের অনেকে।
এদিকে তারই সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গতকাল রাতে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে সেটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভাইরালে জামায়াত নেতা-কর্মীদের মাঝে বিষয়টি ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এমনকি তার সংগঠনের অনেক সদস্য এমন ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে অনেকে মন্তব্য করেন। কেউ কেউ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কমনসেন্স ও পূর্বের পেশা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
ওই সংগঠনের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন “অবশেষে কালো তালিকায়!!!
সীতাকুণ্ড জামায়াতের যুব সমাজের নিউজ করায় আমাদের কয়েকজন (আমি জহির, নজরুল, ,দুলু, ইকবাল, মীর মামুন, সাইদুল হক, জাহেদ, হাকিম মেল্লা, ইকবাল, শেখ সাইফুল সহ আরও কয়েকজন) কে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব কালো তালিকায় লিপিবদ্ধ করেছে। এমন একটা নোটিশ ঐদিন সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মধ্যেই আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের ঐ কথিত নেতাকে বয়কট করা শুরু করেছি আমরা।”
এ বিষয়ে পোস্ট দাতা জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি জানান, সাংবাদিক নামধারী পঞ্চম শ্রেণির গন্ডি না পেরোনো কাইয়ুম চৌধুরী একসময় জুটমিলের শ্রমিক হয়ে সিলেট হবিগঞ্জ থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন এবং এখানে বিয়ে করে সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা বনে যান। ৫ আগষ্টের পর আমাদের ক্লাবের নির্বাচনে পেশিশক্তি ও কালো টাকা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে নেয়। এরপর থেকে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। আগে থেকে সে জামায়াত বিদ্বেষী হলেও পদ পাওয়ার পর প্রকাশ্যে জামায়াতে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে জামায়াত কর্মীদের অভিমত, কাইয়ুম চৌধুরী কি করে ভাবলেন জামায়াতকে বাদ দিয়ে তিনি সীতাকুণ্ডে সংগঠন করবেন? তিনি ব্যক্তিগতভাবে যেকোন সংগঠনের বা আদর্শের হতে পারেন সেটি তার বিষয়। কিন্তুু জামায়াতে ইসলামী নিয়ে এমন মনোভাব পরিহার তাকে করতে হবে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে তাকে।
সচেতন মহল বলছে, পরশ্রীকাতরা, হিংসা আর দাম্ভিকতায় ভরা কাইয়ুম চৌধুরী কখনও সাংবাদিক হতে পারেন না। তিনি এসব পরিহার করে তারপর সাংবাদিক হতে হবে। তাছাড়া তার মধ্যে যথেষ্ট পেশাগত অযোগ্যতা রয়েছে। তিনি অপেশাদার আচরণের মাধ্যমে সবাইকে বিভ্রান্ত করছেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি কুতুব উদ্দিন শিবলী জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং আমাকে অনেকে এসএমএস করেছেন। আজকের মিটিংয়ে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো।
জামায়াত বিদ্বেষ পোষণ ও জামায়াতের সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে ঘোষণা কেন জানতে চাইলে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে আমি সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় জামায়াত সমর্থিত বলয় মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা জাহাঙ্গীর এর মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ সময় তিনি পতিত স্বৈরাচারের এমপি এস এম আল মামুনের নির্বাচনী উপদেষ্টা ও ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সৌমিত্র চক্রবর্তীর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, সৌমিত্রের সাথে এমপি মামুনের কখনও যোগাযোগই ছিল না। সৌমিত্র একটা বাচ্চা ছেলে। সে কি করে মামুনের নির্বাচনী উপদেষ্টা হয়?