চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লালখান বাজার, শুলকবহর, ষোলশহর, উত্তর পাহাড়তলী এই চারটি ওয়ার্ড পাহাড় ধ্বসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় নিন্ম আয়ের কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। প্রতিনিয়তই পাহাড়ে বাসিন্দার সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শহরে বাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকির মধ্যেও আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে। তাছাড়াও সরকারি অসাধু কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে পাহাড়ে বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সুবিধা দিয়ে পাহাড়ে বসবাসে আরও উৎসাহিত করছে। এতে দূর্যোগকালিন সময়েও কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। তাছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও তেমন কোন সুবিধা যেমন নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। সবকটি সংস্থার সমন্বয় না থাকার ফলে পাহাড় ধ্বসে প্রায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে নগরীতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের একটি হোটেলে “চট্টগ্রামে পাহাড়ধ্বস ঝুঁকি মোকাবেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতি গাইডলাইন বৈধকরণ কর্মশালায়’’ এসব কথা বলেন বক্তারা।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড় কাটার ফলে যখন লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, ষোলশহর, আকবরশাহ, পাহাড়তলী এলাকায় পাহাড় ধ্বস হয় বারবার মাইকিং করার পরও বাসিন্দারা সেখান থেকে সরতে চান না। তারা তাদের ঘর ছাড়তে নারাজ থাকে। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের ও প্রশাসনকে উল্টো অভয় দেন যেন তারা যেন পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিয়ে কোন চিন্তা না করেন। তারা অনেক ভালো আছেন পাহাড়ে। কিন্তু পাহাড়ে পরবর্তীতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কর্মশালায়, সাংবাদিক, মানবাধিকার, স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিবেশ কর্মীসহ অনেকেই অংশ নেন।
তারা মুক্ত আলোচনায় বলেন, গেল ১৬ বছরে ৩০০ মানুষ মারা গেছে নগরে শুধু পাহাড় ধ্বসে। ২০০৭ সালে লালখান বাজারে ১২৭ মারা গেছেন। প্রতিবছরই পাহাড় ধ্বসে মানুষ মারা যাচ্ছে। কোন সচেতনতা আসছে না। চলতি বছরও আনোয়ারায় কেইপিজেডে মে দিবসের ছুটিতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে পাহাড় ধ্বসে। তারা পাহাড়ে ছায়া খুঁজতে গিয়ে পাহাড় ধ্বসে মারা যান। নগরে কোন বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র নেই। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোই আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। মানুষ সাধারণত কষ্টে অর্জিত তার সম্পদ ছেড়ে যেতে চায় না। গবাদিপশু, স্বর্ণালংকার, দলিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার যেমন নিরাপত্তা দিতে হবে তেমনি বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, কিশোরী, গর্ভবতী, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কক্ষ, থাকার সুব্যবস্থা, ওয়াশরুম থাকতে হবে। রান্নাঘর, স্বাস্থ্যসম্মত শুকনো খাবার, সার্বক্ষণিক আলো, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, স্বাস্থ্য সেবা, ওষুধ, চিকিৎসক, মনিটরিং সেল, আশ্রয়নকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি প্রয়োজন। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি, স্বেচ্ছাসেবক, প্রশাসন, শিক্ষক, চিকিৎসক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান যেন সরকারের সহযোগিতায় জমি বরাদ্দ নিয়ে আধুনিক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মশালায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের খসড়া তৈরি করে দেখান অংশিজনেরা। এতে দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা কমিটি, স্কুল কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আমিন , চসিকের শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আকতার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। ইপসার প্রজেক্ট অফিসার আতাউল হাকিমমের সঞ্চালনায় এতে আশ্রয়কেন্দ্রের গাইডলাইন সম্পর্কিত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ইপসার রিসার্স, মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন ম্যানেজার ডক্টর মোরশেদ হোসেন মোল্লা, আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির প্রমুখ।