চট্টগ্রাম বুলেটিন

খুলশীতে পাহাড় কেটে গরুর খামার গড়ছে প্রভাবশালী চক্র

চট্টগ্রামের পশ্চিম খুলশীতে পাহাড় কেটে গরুর খামার বানাচ্ছে প্রভাবশালী একটি দখলবাজ চক্র। ইতিমধ্যে চক্রটি সেখানে বড় একটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে করেছে। এতে ওই এলাকার পাহাড়টিসহ আশেপাশের পরিবেশ চরম হুমকিতে পড়েছে। শুধু তাই নয় এক ব্যবসায়ীর জমি দখল করে ওই খামার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে।

অভিযোগ, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক নেতা আমান উল্লাহর সহযোগিতায় আরফান নামে এক ব্যক্তি পাহাড়টি কেটে খামার গড়ে তুলছেন। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকারও লেনদেন হয়েছে। প্রথমে একটি গ্রুপ ঘটনাস্থলে গিয়ে চাঁদাদাবি করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে আমান উল্লাহ হস্তক্ষেপ করে তাদেরকে থামিয়ে দেয়। একইসাথে তিনি যুক্ত হয়ে টাকা নেয়। এরপর আরফান নামে ওই ব্যক্তি পাহাড় কাটা ও খামার গড়ার কাজ অব্যাহত রাখে। আরফানের পরিচয় পাওয়া না গেলেও তিনি একটি ব্যাংকে চাকরী করেন বলে জানা যায়।

সরেজমিনে পশ্চিম খুলশীর জালালাবাদ কাঁঠালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘেরা দিয়ে ৫-৬ জন শ্রমিকদের দিয়ে পাহাড়ে গরুর খামার নির্মাণের কাজ চলছে। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে গরুর শেড বানানো হচ্ছে সেখানে। এছাড়াও পাশ্ববর্তী আরেকটি স্পটে পাহাড় কেটে একটি মার্কেট করা হচ্ছে। সেখানে পাহাড়ের উপর পর্যন্ত দেওয়াল তোলা হয়েছে। কয়েকটি প্লটে ভাগ করে দোকান বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। উপরের ছাদ ছাড়া দোকানগুলোর সব কাজ প্রায় শেষের দিকে।

এদিকে এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদেরকে শোকজ করেছে। আগামী ২৯ এপ্রিল বেলা বারোটায় শুনানীর জন্য দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, আরফান নামে একজন পাহাড় কেটে গরুর খামার করছেন। এর আগেও সেখানে পাহাড় কাটা হয়েছে। তখনও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসছিলো। জরিমানা বা মামলা হয়নি ফলে আবারও কাটা শুরু করে।

খালেদ মাহমুদ নামে একজন বলেন, পাহাড় কাটা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। কিন্তুু কোন অভিযান দেখিনা। এখানে অলরেডি মার্কেট করা হয়েছে পাহাড় কেটে। এখনও পেছনে পাহাড় কাটা হচ্ছে। আর গরুর খামারতো কয়েকদিন আগে থেকে শুরু হয়। পাহাড় কেটেই গরুর খামারটি করা হচ্ছে। শুনেছি রাজনৈতিক লোকজন জড়িত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক সোনিয়া বলেন, আমরা তাদেরক নোটিশ দেওয়া দিয়েছি। শুনানী হলে কে কাটছে, কতটুকু কাটল, কারা জড়িত এবং পাহাড়টি কার এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব।

জানা গেছে ওই পাহাড়ে বেশিরভাগ সরকারি খাস জায়গা হলেও কিছু জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন। বদিউর রহমান গংদের নামে সেখানে ১৩ কাঠা জমির নামজারি রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই গংয়ের একজন মোঃ আশরাফুল আহসান বলেন, আমাদের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর কাছে আবেদন করি। এরপর জেলা প্রশাসক রাজস্ব থেকে কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যাণ্ডকে নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও চার মাসেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা এখনো আমাদের জায়গায় যেতে পারছিনা। তিনি আরো অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক নেতা আমান উল্লাহর সহযোগিতায় জায়গা দখল করে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পাহাড় কেটে খামার করছেন আরফান নামে এক ব্যাংকার। তার কাছে কোন কাগজপত্র নাই, অথচ গায়ের জোরে তিনি টাকা ঢেলে সব করছেন।

জানতে চাইলে মো. আরফান বলেন, সেখানে পাহাড় কাটার কোন ঘটনাই ঘটেনি। কারো জায়গা দখল করি নাই আমি। জায়গাগুলো আমি মেহের আলী নামে একজনের কাছ থেকে লীজ নিয়েছি। আমান ভাইও জানিয়েছেন সেগুলোর ওনার জায়গা নয়, মেহের আলীর সব ডকুমেন্টস ঠিক আছে বলেই আমি নিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নোটিশ আমি পাইনি।

জানতে চাইলে সাবেক যুবদল নেতা আমান উল্লাহ বলেন, মূলত আমাদের দলের কিছু ছেলে সেখানে কাজে বাধা দেয়। তখন তারা (আরফান) মনে করে আমাকে ধরলে কাজ হবে অর্থাৎ ছেলেরা বিরক্ত করবে না। তখন আমি দলীয় ছেলেদেরকে বললাম তোমরা কাজে বাধা দিচ্ছো কেন? ওদের জায়গায় ওরা কাজ করুক। এই হচ্ছে আমার সম্পৃক্ততা, অন্য কোন সম্পৃক্ততা আমার নাই। আমি পাহাড় কাটার বিষয়ে অবগত নয়।

Tags :

সর্বশেষ