চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এজিএস এবং সহ-খেলাধূলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদ দুটিতে জিততে পারেনি ইসলামী শিবির। এছাড়া ২৬ পদের মধ্যে ২৪টিতেই জয়লাভ করেছে তারা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪৪ বছর শিবির আবারও চাকসুর নেতৃত্বে ফিরেছে। তবে এবারের নির্বাচনের থেকেই শিবির পূর্ণ প্যানেলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত এজিএসসহ দুটি পদ হারাতে হলো তাদের। কিন্তু তৃতীয় গুরুত্ব পদ এজিএসে কেন শিবির জয়ী হয়নি তা জানা গেল বিভিন্ন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে।
জানা গেছে, এজিএস পদে শিবির প্যানেলে ছিল সাজ্জাদ হোসেন মুন্না। আর ছাত্রদল প্যানেলে লড়েন আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস, সচেতন প্যানেল থেকে আমিনুল ইসলাম রাকিব আর বাম প্যানেল থেকে জাকিরুল ইসলাম। এর মধ্যে ছাত্রদল প্যানেলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৭০১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর শিবিরের এজিএস প্রার্থী সাজ্জান হোসেন মুন্না পেয়েছেন ৫০৪৫ ভোট। বাম প্যানেলের জাকিরুল ইসলাম পেয়েছেন ২৯৫ ভোট, স্বতন্ত্র জান্নাতুল ফেরদৌস পেয়েছেন ২০৫ ভোট ও সচেতন প্যানেলের আমিনুল ইসলাম রাকিব পেয়েছেন ১০৬ ভোট। পলাশ দে পেয়েছেন, ১০৬২ ভোট, আব্দুল্লাহ আল মামুন ৬৩৫ ভোট, সাঈদ মুহাম্মদ মুশফিক হাসান ৪৯৪ ভোট পেয়েছেন। মোট ২১ জন এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন রিপন পেয়েছেন ৫৩৫ ভোট। জানা গেছে সাখাওয়াত হোসেন রিপনই শিবিরের ভোটে প্রভাব ফেলেছে। এতে শিবিরের এজিএস প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন মুন্নার ভোট কমে যায়। তাছাড়াও েএজিএস পদে ২১ জনের মধ্যে অন্তত নয়জন প্রার্থী দুইশোর বেশি ভোট পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩’শো থেকে ৬’শো চারজন। আর ২’শো থেকে তিনশোর নিচে ভোট পেয়েছেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা পাঁচজন। তাছাড়াও অন্য প্রার্থীরা শতাধিকের বেশি ভোট পেয়েছেন। যদিও জিএস পদে ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র চারজন প্রার্থী উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছেন। আর চারজন প্রার্থী ৩’শো থেকে ৬০০ ভোট পেয়েছেন। চাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদ ভিপি, জিএস পদে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা ছাড়া বাকিরা একশোর কম ভোট পেয়েছেন। যেমন ভিপি পদে ১২ জন প্রার্থী একশোর কম ভোট পেয়েছেন। আর জিএস পদে নয়জন একশোর কম ভোট পেয়েছেন। কিন্তু এজিএস পদে ৫ জন একশোর কম ভোট ফেলে তাদের ভোটের পরিমাণ প্রায় একশোর কাছাকাছি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাখাওয়াত হোসেন রিপন আগে শিবিরের সাথে যুক্ত থাকায় এই নির্বাচনে এজিএস প্রার্থী হওয়ায় তাকে অনেকেই ভোট দিয়েছেন। সবাই ভেবেছেন তিনি মূলত শিবিরের প্রার্থী। অথচ চলতি বছরের জুলাইয়ে তিনি শিবির থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। সাখাওয়াত হোসেন রিপন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক কলেজ কার্যক্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি শিবিরের সদস্য ছিলেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শিবির থেকে বিদায় নেওয়া সাখাওয়াত হোসেন শিপন জুলাই আন্দোলনে কর্মী ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সাখাওয়াতের শিবিরে না থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে এমনটা হয়তো হতো না। আগে যেহেতু শিবিরে ছিলে সেহেতু অনেকেই ভেবে নিয়েছেন তিনি শিবিররই। তার ভোট বেশি কাস্ট হওয়ায় শিবিরের সম্প্রীতি শিক্ষার্থী প্যানেলের এজিএস প্রার্থী কম ভোট পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অন্য একটি অংশ দাবি করেন, এজিএসে পদে বেশি প্রার্থী ও ভোট বেশি পাওয়ায় শিবির কম ভোট পেয়েছে।
জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন শিপন জানান, আমি শিবির থেকে বিদায় থেকে নিয়েছি চলতি বছরের জুনে। আমি তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী নয়। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তবে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র চলছিল।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরেরর সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় শিপন আমাদের সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন৷ তার ভোট চাকসুতে আমাদের প্যানেলের এজিএস পদে বিজয়ী না হওয়ার পেছনে তেমন কোন প্রভাব পড়েছে আমরা মনে করিনা৷ যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই যোগ্য। সবাইকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত চাকসু গড়ে তুলতে চাই।